একদিনের ছোট্ট সফরে আঁটপুর-দ্বারহট্ট-রাজবলহাট

সাধারণত ইতিহাস আর টেরাকোটা এই দুটো শব্দ একসাথে শুনলেই আমাদের মনে প্রথমেই আসে বিষ্ণুপুরের কথা। কিন্তু তা তো একদম ঘরের কাছে নয় যে ইচ্ছে হলেই চলে গেলাম, তাই ভাবছিলাম যে এইরকম কোনো জায়গা যদি স্বল্পদূরত্বে অবস্থিত হতো! এরকমটা ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ করে মাথায় এলো আঁটপুরের কথা, আর আঁটপুর যখন এলো তখন স্বাভাবিক ভাবেই পার্শ্ববর্তী দ্বারহট্ট ও রাজবলহাট প্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত হয়েই যায়। অতএব ৯মার্চ, ২০২৫ সকালে আমার দুই চাকার পক্ষীরাজে চেপে বেরিয়ে পড়লাম এই তিন জায়গার উদ্দ্যেশ্যে।

এদিন যা যা দেখলাম  (ক্রমানুসারে)
---------------------------------------

আঁটপুর
---------

১) আঁটপুর রামকৃষ্ণ মঠ (সকাল ১১:৩০ থেকে দুপুর ৩:৩০ অব্দি বন্ধ) ও সংলগ্ন নরেন্দ্র সরোবর 


মূল উপাসনালয়

মূল উপাসনালয়ের ভিতরে

দূর্গা ও ধুনি মণ্ডপ

স্বামী প্রেমানন্দের (বাবুরাম) বংশের লক্ষীনারায়ণ মন্দির

ধুনি মণ্ডপের ভিতরে

স্বামীজীর কক্ষ

মা সারদার কক্ষ

নরেন্দ্র সরোবর

২) শ্যামের পাট 

শ্রী শ্রী পরমেশ্বরদাস ঠাকুরের শ্রীপাট

শ্রীপাটের বিগ্রহ

শ্রী শ্রী পরমেশ্বরদাস ঠাকুরের সমাধি

দ্বারহট্ট
--------

৩) শ্রী শ্রী দ্বারিকা চন্ডী মাতার মন্দির

শ্রী শ্রী দ্বারিকা চন্ডী মাতার মন্দির

শ্রী শ্রী দ্বারিকা চন্ডী মাতার বিগ্রহ

৪) রাজরাজেশ্বর মন্দির ও সংলগ্ন তিনটি শিবমন্দির

রাজরাজেশ্বর মন্দির
 
রাজরাজেশ্বর মন্দির সংলগ্ন তিনটি শিবমন্দির

আঁটপুর
---------

৫) শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ জীউর মন্দির ও সংলগ্ন খড়ের ছাউনির চণ্ডীমণ্ডপ (সকাল ১০:৩০ থেকে ১টা, বিকেলে ৫ টা থেকে ৭:৩০, শীতের সময় মন্দির সকালে ১১ টার আগে খোলেনা।)

শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ জীউর মন্দির

শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ জীউর মন্দিরগাত্রে টেরাকোটার অপূর্ব কাজ

শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ জীউর মন্দিরের বিগ্রহ

খড়ের ছাউনির চণ্ডীমণ্ডপ

৬) রাধাগোবিন্দ জীউর মন্দিরের বাইরের বিস্তীর্ণ চত্বরে থাকা ভগ্ন বকুল গাছ, ৫টি শিবমন্দির (গঙ্গাধর, রামেশ্বর, বানেশ্বর, জলেশ্বর ও ফুলেশ্বর), রাসমঞ্চ, দোলমঞ্চ ও মিত্র বাড়ির পুস্করিনী

শিবমন্দির ও মাঝে দোলমঞ্চ

ভগ্ন বকুল গাছ ও একটি শিবমন্দির

একটি শিবমন্দির ও দূরে রাসমঞ্চ
মিত্র বাড়ির পুস্করিণী
                                       

রাজবলহাট 
-------------

৭) শ্রী শ্রী রাজবল্লভী মাতার মন্দির (সারাদিনই খোলা থাকে)

শ্রী শ্রী রাজবল্লভী মায়ের মন্দির চত্বর

মা রাজবল্লভী

শ্রী শ্রী রাজবল্লভী মায়ের মন্দির চত্বরে থাকা বানেশ্বর শিবের বিগ্রহ
                                                             
৮) শ্রীধর দামোদর মন্দির 

শ্রীধর দামোদর মন্দিরগাত্রের টেরাকোটার কাজ

কিভাবে যাবেন
-----------------

এখানে আসার জন্য সব থেকে সেরা উপায় হলো ট্রেন। হাওড়া-গোঘাট শাখার যেকোনো লোকাল ট্রেনে (যেমন গোঘাট/তারকেশ্বর/আরামবাগ/হরিপাল লোকাল) উঠে নামতে হবে হরিপাল স্টেশনে, এরপর টোটোয়/অটোয় পৌঁছে যেতে পারেন এইসব জায়গাগুলিতে। যেহেতু সব জায়গায় পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেই, তাই উচিত হবে যদি হরিপাল থেকেই দরদাম করে একটি টোটো/অটো বুক করে নেন এইসব জায়গায় ঘোরার জন্য। একান্তই এসব বুক না করতে চাইলে স্টেশনের বাইরে থেকে ট্রেকার, বাস (১০ নম্বর বাস-হরিপাল থেকে উদয়নারায়ণপুর, হরিপাল থেকে বড়গাছিয়া গামী বাসও পাবেন) দুইই পাবেন আঁটপুর/রাজবলহাটের। এগুলোতেও সোজা আঁটপুর রামকৃষ্ণ মঠ বা রাজবল্লভী মাতার মন্দিরে পৌঁছতে পারেন। 


কলকাতা/হাওড়া থেকে আরামবাগগামী বাসে এলে গজার মোড়ে নেমে ১০ নম্বর বাস বা ট্রেকার ধরতে পারেন।

কলকাতা থেকে প্রাইভেট গাড়িতে আসতে চাইলে বরানগর, ডানলপ, দক্ষিনেশ্বর হয়ে ডানকুনির রাস্তা ধরুন, সেখান থেকে বাঁদিকে মশাট হয়ে হরিপালের রাস্তা ধরুন, এরপর গজার মোড় থেকে বাঁদিক নিলে পৌঁছবেন আঁটপুর। 

সাঁতরাগাছি দিয়ে এলে অংকুরহাটি থেকে ডান দিকে যে রাস্তাটি মাকড়দা-ডোমজুড়ের দিকে যাচ্ছে, সেটা দিয়েও আপনারা চাইলে পৌঁছতে পারেন এদিকে, আমি নিজেও এদিক দিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ, তারওপর আছে প্রচুর বাম্পার ও বিস্তর ট্রাফিক জ্যাম।

রুট ম্যাপ/ট্যুর প্ল্যান 
-----------------------

ম্যাপটা একটু স্টাডি করলে বুঝবেন আঁটপুর মধ্যিখানে অবস্থিত, এর একদিকে রাজবলহাট, আরেকদিকে দ্বারহট্ট।

আমাদের ট্রিপ প্ল্যানটা একটু খিচুড়ি হয়ে গিয়েছে তার মূল কারণ হলো আঁটপুরের রাধাগোবিন্দ জীউর মন্দিরের সময়, এটি শীতকালে মার্চ মাস অব্দি বেলা ১১ টার আগে খোলেনা। আবার ওদিকে আঁটপুরের রামকৃষ্ণ মঠ বেলা ১১:৩০ এ বন্ধ হয়ে যায়।

তবে একটা সুস্থ রুট ম্যাপ ফলো করতে হলে রাজবলহাট বা দ্বারহট্ট দিয়ে সফর শুরু করা বাঞ্চনীয়।

যেহেতু সর্বত্র বাস নেই, তাই ট্রেনে আসলে হরিপাল স্টেশনে নেমে বাইরে থেকে দরদাম করে সারাদিনের জন্য সব জায়গাগুলি ঘুরিয়ে আবার স্টেশনে নামিয়ে দেবে এইরকম শর্তে একটি টোটো/অটো ভাড়া করে নিন, তাতে ঘুরতে সুবিধা হবে।

পার্কিং
-------

এতগুলি জায়গার মধ্যে গাড়ি রাখার সব থেকে ভালো বন্দোবস্ত রয়েছে আঁটপুর রামকৃষ্ণ মঠে। দ্বারহট্ট এবং রাজবলহাটে গাড়ি রাখার জায়গা আদৌ আছে কিনা সে নিয়ে সন্দেহ আছে, রাস্তা অপ্রশস্ত। তাই বাইক/স্কুটি সব থেকে সেরা মাধ্যম এখানে।

আশে পাশে আরো কয়েকটি দেখার জায়গা  
----------------------------------------------------

আঁটপুর 
---------

১)  সিদ্ধেশ্বরী মাতার মন্দির (অনেকে এনাকে রাজবলহাটের মা রাজবল্লভীর বোন বলেন)

রাজবলহাট 
-------------

২) রাধাকান্ত জিউ মন্দির

৩) রাজবল্লভী মায়ের দীঘি ও সংলগ্ন ভারত সেবাশ্রম সংঘ

ভোগের ব্যবস্থা
------------------

এই গোটা ট্রিপে ভোগ গ্রহণের অপশন রয়েছে মূলত দুটি জায়গায়, আঁটপুর রামকৃষ্ণ মঠে ও রাজবলহাটে রাজবল্লভী মাতার মন্দিরে। 

আশেপাশে সেরকম খাবার দাবারের দোকান নেই তাই যদি সারাদিনের প্রোগ্রাম থাকে তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আঁটপুর রামকৃষ্ণ মঠে পৌঁছে নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময়ে (১০০ টাকা জনপ্রতি খুব সম্ভবত) দুপুরের ভোগের কুপন সংগ্রহ করুন। বেঞ্চ-টেবিলের ব্যবস্থা আছে এখানে। ভোগের জন্য ০৩২১২-২৫৯৯১০ নম্বরে আগের দিন বিকেল ৪ টা থেকে ৬ টার মধ্যে ফোন করবেন। ভোগের সময় বেলা ১১:৪৫|

রাজবলহাটে রাজবল্লভী মাতার মন্দিরেও দুপুরে ভোগের বন্দোবস্ত রয়েছে, নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময়ে (৩০ টাকা জনপ্রতি খুব সম্ভবত) দুপুরের ভোগের কুপন সংগ্রহ করুন, এখানে কিন্তু ভোগে আমিষ থাকে। মূল্য কম বলে খুব ভিড় হয়। বেঞ্চ-টেবিলের ব্যবস্থা থাকলেও তা সংখ্যায় খুবই কম, এখানে মূলত নিচে বসেই খাবার খায় লোকজন। ভোগের সময় দুপুর ১:৩০/৪৫| চেষ্টা করবেন সকাল ১০ টার মধ্যে কুপন সংগ্রহ করতে।

থাকার ব্যবস্থা 
----------------

যদিও এই সব জায়গা একদিনে আরামসে কভার হয়ে যায় তাও যদি থাকার প্ল্যান থাকে সেক্ষেত্রে আঁটপুর রামকৃষ্ণ মঠের গেস্ট হাউসে আপনারা রাত্রিযাপন করতে পারেন। এখানে রুম বুক করতে হলে অন্তত এক সপ্তাহ আগে সব ডিটেইলস সহ (কবে, কতদিন, কজন ইত্যাদি) ইমেইল করুন এখানে (antpur@rkmm.org)।

বিশেষ কয়েকটি কথা 
-------------------------

১) সময়টা একটু গোলমেলে হলেও আঁটপুরের শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ জীউর মন্দির কোনোভাবেই বাদ দেবেন না। টেরাকোটার অপূর্ব সুন্দর কাজ রয়েছে মন্দিরগাত্রে।

২) দ্বারহট্টের মন্দিরগুলিও বেলার দিকে বন্ধ হয়ে যায় তাই এগুলিও তাড়াতাড়ি দেখার চেষ্টা করবেন। আমরা বেলা ১১টার দিকে দিয়েছিলাম, দ্বারিকা চন্ডী মাতার মন্দির খোলা থাকলেও রাজরাজেশ্বর মন্দির কিন্তু বন্ধ ছিল, জানিনা এটি বর্তমানে খোলা হয় কিনা। টেরাকোটার অপূর্ব সুন্দর কাজ রয়েছে এই মন্দিরগাত্রে, অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেলেও এখনো বেশ খানিকটা অবশিষ্ট রয়েছে।

৩) রাজবলহাটে রাধাকান্ত জিউ মন্দির চাইলে বাদ দিতে পারেন, অতীতের টেরাকোটার দারুন কাজের আর বিশেষ কিছুই অবশিষ্ট নেই এখানে। শ্রীধর দামোদর মন্দির কিছুটা ভালো অবস্থায় থাকলেও রিপেয়ারিং এর কাজের সময় আগের টেরাকোটার কাজ অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

#weekendtrip #weekendtripfromkolkata #tourplan #hooghly #rajbalhat #antpur #dwarhatta #westbengal #westbengaltourism

Comments

Popular posts from this blog

হাওড়ার একমাত্র অক্ষত সেমাফোর টাওয়ার

হাওড়ার বেলুড় রাসবাড়ি

হাওড়ার ডোমজুড়ের নারনা কালীবাড়ি