মহানাদ/ব্রহ্মময়ী কালীবাড়ি ও মহানাদ জটেশ্বর শিবমন্দির
হুগলি জেলার চুঁচুড়া সাবডিভিশনের পোলবা-দাদপুর ব্লকের মহানাদ জায়গাটি অতি প্রাচীন। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (ASI) এখানে বিভিন্ন সময়ে খননকার্য চালিয়ে কুষাণ, গুপ্ত ও পাল যুগের নানান প্রত্নসামগ্রী উদ্ধার করেছে। অতীতে নাথ যোগীদের সাধনার পীঠস্থল ছিল এই জায়গা।
মহানাদ/ব্রহ্মময়ী কালীবাড়ি
-------------------------------
জমিদার কৃষ্ণচন্দ্র নিয়োগী ১৮৩০ সালে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ওনার কাঠ ও চিনির বড় ব্যবসা ছিল। স্বপ্নাদেশ পেয়ে মাকে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ১৮২২ সালে মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয় । ১৮৩০ সালে মাঘ মাসে কৃষ্ণ চতুর্দশী তিথিতে রটন্তী কালী পূজার সময়ে মন্দিরে দক্ষিণা কালীর প্রতিষ্ঠা করা হয়। তারপর থেকে একই ভাবে মায়ের পুজো হয়ে আসছে।
![]() |
ব্রহ্মময়ী কালীবাড়ি |
শোনা যায়, এই মন্দির দেখেই রানি রাসমণি দক্ষিণেশ্বরে মন্দির করার অনুপ্রেরণা পান। (যদিও এই নিয়ে দ্বিমত আছে)
![]() |
ব্রহ্মময়ী কালীবাড়িতে |
মায়ের মূর্তি কষ্টি পাথর দ্বারা নির্মিত এবং মা এখানে পঞ্চমুন্ডীর আসনের ওপর বিরাজমান।
![]() |
মা ব্রহ্মময়ী |
এখানে প্রতি অমাবস্যায় ছাগ বলি হয়। ভক্তরা যারা মানসিক করেন তারা এখানে আসেন মানসিক পূরণ করতে। মাঘ মাসে রটন্তী কালী পূজার সময়ে হয় বিশেষ পূজা ও উৎসব।
মা ব্রহ্মময়ীর নামে ৯০ বিঘা জমি রয়েছে। সেটা থেকেই চলে পুজোর খরচ।
মহানাদ জটেশ্বর শিবমন্দির
-------------------------------
শোনা যায়, বহু প্রাচীনকালে এই মন্দিরটি স্থাপন করেন গোরক্ষনাথ। তারপর নাকি রাজা চন্দ্রকেতুর সময় এই মন্দিরটি আবার নতুন করে তৈরী করা হয়। বর্তমান মন্দিরটি ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তৈরী করা হয়।
![]() |
জটেশ্বর শিবমন্দির |
![]() |
জটেশ্বর শিব |
বলা হয় এই মন্দিরের সর্বপ্রথম মোহান্ত নাকি ছিলেন কপিল মুনি। বশিষ্ঠ দেবও এখানের মোহান্ত ছিলেন, ওনার সমাধিটি এখনো মন্দিরের পাশে থাকা বাজারের এক পাশে রয়েছে, দুর্ভাগ্যবশত জায়গাটি খুবই নোংরা এবং লোকজন আশে পাশে আবর্জনা ফেলা থেকে মূত্র ত্যাগ কিছুই বাকি রাখেনি।
বশিষ্ঠ দেবের সমাধিস্থল |
মন্দিরের পাশেই রয়েছে একটি বড় পুস্করিণী (এটি আদতে হুগলি নদীর প্রাচীন প্রবাহ), এটি চন্দ্রকেতু দহ, বশিষ্ঠ গঙ্গা ইত্যাদি নানান নামে পরিচিত।
![]() |
বশিষ্ঠ গঙ্গা |
শিব মন্দির ছাড়াও এই মন্দির চত্বরে রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি মন্দির।
![]() |
জটেশ্বর শিবমন্দির চত্বরে |
![]() |
জটেশ্বর শিবমন্দির চত্বরে |
![]() |
জটেশ্বর শিবমন্দির চত্বরে আমরা কজন সংঘের কালীমন্দির |
![]() |
আমরা কজন সংঘের কালীমন্দিরের বিগ্রহ |
বিভিন্ন সময়ে খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত কিছু প্রাচীন মূর্তি খোলা আকাশের তলায় রয়েছে এই মন্দির চত্বরে। মূর্তিগুলির মধ্যে কাল ভৈরব, বটুক ভৈরব ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। অন্নপূর্ণা মন্দিরে রয়েছে মহাবীর ও বুদ্ধের মূর্তি।
![]() |
জটেশ্বর শিবমন্দির চত্বরে একপেয়ে ভৈরবের মূর্তি |
![]() |
জটেশ্বর শিবমন্দির চত্বরে থাকা আরো কিছু ভেঙে যাওয়া প্রাচীন মূর্তি |
![]() |
জটেশ্বর শিবমন্দির চত্বরে থাকা অন্নপূর্ণা মন্দির |
অন্নপূর্ণা মন্দিরের অভ্যন্তরে থাকা মহাবীর ও বুদ্ধের মূর্তি |
শিবরাত্রির সময় এখানে খুব ধুম ধাম করে পূজা অনুষ্ঠিত হয়, এক মাস ব্যাপী মেলাও বসে।
ট্রেনে কিভাবে আসবেন
---------------------------
হাওড়া থেকে বর্ধমান মেইন লাইনের লোকাল ট্রেন ধরে আপনারা মগরা অথবা পাণ্ডুয়া স্টেশনে নামবেন, সেখান থেকে অটো/টোটো/ম্যাজিক গাড়িতে মহানাদ পৌঁছতে পারেন।
আমরা সফর শুরু করেছিলাম মগরা স্টেশন থেকে, স্টেশন থেকে বেরিয়ে খানিকটা এগিয়ে গেলেই পেয়ে যাবেন মহানাদ যাওয়ার ম্যাজিক গাড়ি, এছাড়াও এখান থেকে মহানাদ যাওয়ার বাসও পাওয়া যায়। আমরা ম্যাজিক গাড়িতেই গিয়েছিলাম, ভাড়া ২০ টাকা জনপ্রতি। ম্যাজিক গাড়ি মহানাদে যেখানে নামাবে সেটা একটা বাজার এলাকা, সেখান থেকে মাত্র ২ মিনিটের হাঁটা পথেই রয়েছে জটেশ্বর শিবমন্দির। এখান থেকে হেঁটে পৌঁছতে পারেন ব্রহ্মময়ী কালীবাড়িতে, নাহলে টোটো তো আছেই।
তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার
-------------------------------
পশ্চিম বাংলার তীর্থ-প্রলয় সেন
হুগলি জেলার পুরাকীর্তি-নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য
এই সময়
Brick Temples of Bengal-David McCutchion
https://kinjalbose.wordpress.com
https://jateswar.blogspot.com (বশিষ্ঠ দেবের সমাধি ও অন্নপূর্ণা মন্দিরের অভ্যন্তরে থাকা মহাবীর ও বুদ্ধের মূর্তিগুলির ছবি এখান থেকে নিয়েছি। সমাধির বর্তমান ছবি আমার কাছে থাকলেও তা দিলাম না কারণ জায়গাটি এখন আবর্জনায় পরিপূর্ণ। অন্নপূর্ণা মন্দিরের গেট বন্ধ থাকার জন্য ভিতরে প্রবেশ করতে পারিনি, বাইরে থেকে ছবি তুললেও তাতে ভিতরের জিনিস স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছিলো না, তাই এই দুটি ছবি এখান থেকে জোগাড় করতে বাধ্য হয়েছি।)
#weekendtrip #weekendtripfromkolkata #tourplan #hooghly #mahanad #westbengal #westbengaltourism
Comments
Post a Comment