একদিনের ছোট্ট সফরে রিষড়া-কোন্নগর-শ্রীরামপুর

দূরে কোথাও এবার শীতকালে আর যাওয়া হয়নি, তাই ধারে কাছের জায়গা খুঁজতে গিয়ে মনে হলো হুগলির কয়েকটি জায়গায় যাওয়ার কথা, অতএব সেইমতো গত ১৫ ডিসেম্বর সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম এই কটি জায়গার উদ্দ্যেশ্যে। 

ট্রেন
------

আমি সফর শুরু করেছিলাম রিষড়া থেকে, এই লাইনে প্রচুর ট্রেন রয়েছে। আমি আলাদা করে কোনো ট্রেনের কথা উল্লেখ করছিনা। যাত্রা শুরু হয়েছিল হাওড়া স্টেশন থেকে। হাওড়ায় ফেরার ট্রেন ধরেছিলাম শ্রীরামপুর স্টেশন থেকে।     

এদিন যা যা দেখলাম  (ক্রমানুসারে)
----------------------------------------

রিষড়া স্টেশন থেকে পায়ে হেঁটে পৌঁছে গিয়েছিলাম,

১) শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রম মন্দির 

মূল মন্দির

মূল মন্দির

মন্দির চত্বরে প্রেমঘনানন্দ স্মৃতি ভবন

মূল মন্দিরের ভিতরে

মূল মন্দিরের ভিতরে উপাসনাকক্ষ

আশ্রম চত্বরে থাকা মায়ের মন্দিরের বিগ্রহ

এরপর এখান থেকে হেঁটে গিয়েছিলাম জিটি রোড অব্দি, সেখান থেকে ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে টোটোয় চড়ে গিয়েছিলাম বাঙ্গুর পার্ক স্টপেজে, নেমেছিলাম জিটি রোডেই, সেখান থেকে হেঁটে গিয়েছিলাম,

২) সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির

সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির

সিদ্ধেশ্বরী কালীমা

মন্দিরের শিব লিঙ্গ

এরপর ওখান থেকে আবার একই পথে জিটি রোডে ফিরে আসার পথেই রয়েছে,

৩) দাঁ বাড়ির মদনমোহন জিউ মন্দির  

দাঁ বাড়ির মদনমোহন জিউ মন্দির

এরপর জিটি রোডে উঠে আরেকটু সামনে এগিয়ে দেখে নিয়েছিলাম হুগলি নদীর একদম পাশেই অবস্থিত,

৪) প্রেম মন্দির আশ্রম

প্রেম মন্দির আশ্রম

প্রেম মন্দির আশ্রমে

এখানেই রিষড়া ভ্রমণ শেষ। এরপর জিটি রোড থেকে অটো ধরে কোন্নগরের দিকে রওনা দিয়ে এসে নেমেই দেখি, 

৫) শ্রী রাজ রাজেশ্বরী সেবা মঠ (দুপুরে ১২-৩ বন্ধ থাকে, মন্দির চত্বরের ভিতরে ছবি/ভিডিও তোলা নিষিদ্ধ)

রাজ রাজেশ্বরী মন্দির

এখান থেকে জিটি রোড ধরে খানিকটা এগোলেই রয়েছে,

৬) ১২ মন্দির ঘাট 

১২ মন্দির ঘাট

বামদিকের ৬টি মন্দির

দ্বাদশ শিবমন্দিরের মধ্যে সব থেকে জমকালো বিগ্রহ

এখান থেকে জিটি রোড ধরে আরো খানিকটা এগোলেই রয়েছে,

৭) ব্রাহ্ম সমাজ ও উল্টোদিকের ব্রাহ্ম সমাজ ঘাট 

ব্রাহ্ম সমাজ বিল্ডিং

এখান থেকে একটি টোটোয় চড়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম সিংহী ঘাটের সামনে, সেখান থেকে উল্টোদিকের রাস্তা ধরে খানিকটা হেঁটে গেলেই রয়েছে,

৮) শ্রী অরবিন্দের পৈতৃক ভিটে (শনি, রবি সকাল ৯-১২, সোম থেকে শুক্র-সকাল ৮-৯)

শ্রী অরবিন্দের পৈতৃক বাসভূমি

এই মূর্তির নিচে রয়েছে পন্ডিচেরি থেকে আনা শ্রী অরবিন্দের সমাধির মাটি

ধ্যান কক্ষের ভিতরে

ফিরতি পথে জিটি রোডে ফিরে এসে খানিকটা এগিয়ে দেখে নিয়েছিলাম,

৯) শ্রী শ্রী মাধবানন্দ আশ্রম (দুপুরে ১-৩ বন্ধ থাকে)

মাধবানন্দ আশ্রম
মাধবানন্দ গিরি মহারাজের ব্যবহৃত গাড়ি

মাধবানন্দ আশ্রমে শিব লিঙ্গ

এরপর জিটি রোড ধরে আরো খানিকটা এগিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম কোন্নগরের মূল আকর্ষণ,

১০) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়ি (সময় সকাল ১০-বিকেল ৫ টা, প্রবেশমূল্য ১০ টাকা জনপ্রতি)

অবন ঠাকুরের বাগানবাড়ি

অবন ঠাকুরের বাগানবাড়ি

অবন ঠাকুরের বাগানবাড়ি

বাগানবাড়ির ভিতরে

বাগানবাড়ির ভিতরে

বাগানবাড়ির নিজস্ব গঙ্গার ঘাট

বাগানবাড়ি চত্বর

বাগানবাড়ি চত্বর

বাগানবাড়ি চত্বর

এখানেই কোন্নগর ভ্রমণ শেষ। এরপর জিটি রোড থেকে অটো ধরে কোন্নগর স্টেশনের দিকে রওনা দিই। সেখান থেকে ট্রেন ধরে পৌঁছাই শ্রীরামপুর স্টেশনে। সেখান থেকে টোটোয় চড়ে প্রথমে গিয়েছিলাম,

 ১১) সেন্ট ওলাভ'স চার্চ 

সেন্ট ওলাভ'স চার্চ

সেখান থেকে আয়ে হেঁটে এক এক করে ক্রমান্বয়ে দেখে নিয়েছিলাম,

১২) ড্যানিশ গভর্নমেন্ট হাউস 

ড্যানিশ গভর্নমেন্ট হাউস

১৩) দ্য ডেনমার্ক ট্যাভার্ন 

দ্য ডেনমার্ক ট্যাভার্ন

১৪) বিবেকানন্দ নিধি 

বিবেকানন্দ নিধি

১৫) শ্রীরামপুর রাজ বাড়ি/গোস্বামীবাড়ি

শ্রীরামপুর রাজ বাড়ি

শ্রীরামপুর রাজ বাড়ির দূর্গাদালান

শ্রীরামপুর রাজ বাড়ির অভ্যন্তরে

শ্রীরামপুর রাজ বাড়ির অভ্যন্তরে

এইখানেই আমার এদিনের ভ্রমণের ইতি। এরপর শ্রীরামপুর স্টেশনে চলে এসে হাওড়াগামী ফেরার ট্রেন ধরেছিলাম। 

রুট ম্যাপ/ট্যুর প্ল্যান 
------------------------

হাওড়ার দিক দিয়ে আসলে প্রথমে পড়বে কোন্নগর, তারপর রিষড়া এবং একদম শেষে শ্রীরামপুর। 

তাই হিসেবমতো যেকোনো একটা সাইড দিয়ে ভ্রমণ শুরু করা উচিত কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হলো মন্দিরগুলি, সব মন্দিরই দুপুরে বন্ধ থাকে। স্বাভাবিক ভাবেই প্ল্যানটা খিচুড়ি হয়েই যায়। আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়, আপনারা এই ট্রিপটা দুই ভাগে করুন, একদিন রিষড়া-কোন্নগর, আরেকদিন শ্রীরামপুর।

আমি কিন্তু এই ট্রিপে বেশ কিছু জায়গায় যাইনি (এর বেশির ভাগটাই শ্রীরামপুরে), তার কারণ কিছু আগে দেখা ছিল আর কিছু সময়াভাবে যাওয়া হয়নি। আমি সেরকম কিছু জায়গা নিচে দিয়ে দিলাম, আপনারা চাইলে সেগুলিও দেখে নিতে পারেন।

রিষড়া 
-------

বড়ুয়াপাড়ায় অবস্থিত ধর্মোদয় বুদ্ধ বিহার।

কোন্নগর
----------

শকুন্তলা মায়ের মন্দির (শুধু কাঠামো পুজো হয় কালীপুজোর সময় ছাড়া), সাধুর ঘাট, পঞ্চু দত্ত ঘাট, গোপীনাথ জিউ মন্দির, হুগলি নদীর ধারে অবস্থিত ভগ্নপ্রায় পুরাতন বাটা ফ্যাক্টরি ইত্যাদি।

শ্রীরামপুর
-----------

মাহেশ জগন্নাথ মন্দির, জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি, মদনমোহন মন্দির, শ্রী শ্রী রাধাবল্লভ জিউ মন্দির (সকাল ৬-১২, বিকেল ৪:৩০-৮), রাধা বল্লভ জিউ রাসমঞ্চ, হেনরি মার্টিন প্যাগোডা মন্দির, শ্রীরামপুর কলেজ, রাম সীতা মন্দির, ড্যানিশ সিমেট্রি ইত্যাদি।

বিশেষ কয়েকটি কথা 
--------------------------

১) এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার জন্য যেসব টোটোয় চড়েছি, সেগুলো মোটামুটি জনপ্রতি ১০/১৫ টাকা নিয়েছিল। 

২) মনে রাখবেন সব মন্দিরই কিন্তু দুপুরে মোটামুটি ১২:৩০/১ টা থেকে বিকেল ৪/৪:৩০ অব্দি বন্ধ থাকে, এই ব্যাপারটাকে মাথায় রেখে প্ল্যান করুন। আমি কয়েকটা মন্দিরের সময় ওপরে উল্লেখ করেছি, কোনোটায় কিছু না উল্লেখ করলেও সবই মোটামুটি একই টাইমিং ফলো করে জানবেন।

৩) শ্রীরামপুরে সেন্ট ওলাভ'স চার্চ ও ড্যানিশ গভর্নমেন্ট হাউস আমি কিন্তু বন্ধ পেয়েছিলাম, তাই ভিতরে প্রবেশ করতে পারিনি। ড্যানিশ গভর্নমেন্ট হাউস একটি প্রদর্শনীশালা এখন, এখানে শ্রীরামপুর শহরের গোড়াপত্তনের ইতিহাস সম্পর্কে নানান ছবি ও লেখা রয়েছে, ওখানে একজন আমায় বলেছিলেন এটি নাকি সপ্তাহের কাজের দিনগুলিতে খোলা থাকে। 

৪) শ্রীরামপুরে দ্য ডেনমার্ক ট্যাভার্ন একটি রেস্তোরাঁ এখন, আপনারা চাইলে এখানে ঢুকে উদরপূর্তি করতেই পারেন। এই বিল্ডিংটির ভিতরে ঢুকলে মনে হবে হয়তো একটুকরো ডেনমার্কে পৌঁছে গিয়েছেন, সাথে বাড়তি পাওনা সেখানকার অনেক ডিশ, যা আপনারা অর্ডার করে খেতেই পারেন। তবে মনে রাখবেন এখানে খাবারের দাম কিন্তু একটু চড়া। 

৫) শ্রীরামপুরে বিবেকানন্দ নিধি রাজার বাড়ি নামেও পরিচিত, বাইরে থেকেই দেখতে হবে এটি।

#weekendtrip #weekendtripfromkolkata #tourplan #Hooghly #Rishra #Konnagar #Serampore #WestBengal #westbengaltourism

Comments

Popular posts from this blog

হাওড়ার একমাত্র অক্ষত সেমাফোর টাওয়ার

হাওড়ার বেলুড় রাসবাড়ি

হাওড়ার ডোমজুড়ের নারনা কালীবাড়ি