কলকাতার সিদ্ধিবিনায়ক মন্দির
খাস কলকাতায়, আরো ভালো করে বললে উত্তর কলকাতার মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির খুব কাছেই মার্বেল প্যালেসের পাশেই অবস্থিত এই মন্দিরটি খুব সম্ভবত পূর্ব ভারতের একমাত্র সিদ্ধিবিনায়ক মন্দির। মুম্বাইয়ের জাগ্রত সিদ্ধিবিনায়ক গণেশের মতো এখানকার সিদ্ধিদাতা গণেশের শুঁড়টির অবস্থানও ডান দিকে।
![]() |
সিদ্ধিবিনায়ক গণেশের বিগ্রহ |
এই বিল্ডিংটির ইতিহাস
-------------------------------
এই বাড়িটি স্থানীয়দের কাছে মল্লিকবাড়ি নামে পরিচিত। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার কথা, স্বরূপ চন্দ্র মল্লিক, ৪৮, মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটে ৩৬ কাঠা জায়গা কিনেছিলেন। তাঁর পূর্বপুরুষরা রাজস্থান থেকে এসেছিলেন; পারিবারিক ব্যবসা ছিল স্বর্ণ ও রৌপ্যের ('স্বর্ণবণিক'), ব্যবসার লভ্যাংশ জমিতে বিনিয়োগ করা হয়েছিল এবং এমন একটা সময় ছিল যখন মল্লিক পরিবারের এই শাখা কলকাতায় প্রচুর সম্পত্তির মালিক ছিল (কলকাতা মেডিকেল কলেজ যেই জায়গায় সেটিও নাকি এনাদের ছিল)।
এই মল্লিকদের সিংহবাহিনী মল্লিক নামেও অভিহিত করা হত, ষোড়শ শতাব্দীতে সম্রাট আকবর তাদের 'মল্লিক' উপাধি দিয়েছিলেন।
এই বাড়িটি কিন্তু পাশের মার্বেল প্যালেসের থেকেও পুরোনো। মার্বেল প্যালেসের মালিকরাও মল্লিক পদবীধারী কিন্তু এই মল্লিক আর ঐ মল্লিক আলাদা।
![]() |
সেই মল্লিক বাড়ি যা এখন মন্দিরে রূপান্তরিত হয়েছে |
![]() |
মল্লিক বাড়ি |
মন্দির প্রতিষ্ঠা করলেন কারা ও এর পিছনের কাহিনী
---------------------------------------------------------------------
এই বাড়িটি কিনে তার সংস্কার করে মন্দির প্রতিষ্ঠা করার পিছনে ইমামি গোষ্ঠীর হাত রয়েছে।
১৯৬৮ সালে দুই অভিন্নহৃদয় বন্ধু রাধেশ্যাম আগরওয়াল ও রাধেশ্যাম গোয়েঙ্কা এই বাড়িতেই সাকুল্যে ২০০ বর্গফুট জায়গায় তাঁদের ব্যবসা শুরু করেন। মাত্র কুড়ি হাজার টাকা পুঁজি সম্বল করে তাঁরা পথ চলা শুরু করেছিলেন। তা আজ হাজার হাজার কোটি টাকার এক বিশাল কর্পোরেট সাম্রাজ্য। ২০১৫ সালে ভগ্নপ্রায় অট্টালিকাটি কিনে নেন তাঁরা, এর পর শুরু হয় পুরোনো আদল ও ঐতিহ্যকে বজায় রেখে সংস্কারের কাজ। অবশেষে ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জনসাধারণের জন্য খুলে যায় কলকাতার সিদ্ধিবিনায়ক দেবস্থানম মন্দিরের দরজা।
![]() |
মন্দির চত্বরে দাঁড়িয়ে মল্লিক বাড়ির অন্দরমহল |
আরো অন্যান্য কর্মকান্ড
---------------------------------
বর্তমানে এই মন্দিরে স্বাস্থ্য পরিষেবা, কর্মসংস্থান এবং স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার রয়েছে। একাধারে ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টদের দিয়ে ট্যালি, জিএসটি কোর্স করানো হয়, আবার সঙ্গে শেখানো হয় নার্সিং, অ্যাপারেল ডিজাইনিং এর মত কোর্স। এছাড়া স্পোকেন ইংলিশ যত্ন সহকারে শেখানো হয় সব বয়সীদের, যেখানে সকলেই স্বাগত। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এখানে প্যাথলজির অন্তর্গত সব রকম রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে রক্তে শর্করা আছে কিনা পরীক্ষা করা হয়। শর্করা নির্ভর রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। হার্টের চিকিৎসার জন্য স্বল্পমূল্যে ইইসিপি চালু রয়েছে এখানে। এছাড়া ব্যাথা উপশমের জন্য আকুপাংচার ক্যাম্প করা হয় এখানে। আর এই মন্দিরের বিশেষত্ব হল, সব সময়েই প্রসাদ দেওয়া হয়।
নিত্যদিনের পূজার সময়সূচী ও মন্দির বন্ধ থাকার সময়
-------------------------------------------------------------------------
মঙ্গল আরতি: সকাল ৫:৪৫
মহা আরতি: সকাল ৭ টা
খিচুড়ি ভোগ: সকাল ৯ টা
মহা ভোগ: দুপুর ১২:১৫
এর পর বিকেল ৪:৩০ অব্দি মন্দির বন্ধ থাকে।
খিচুড়ি ভোগ: বিকেল ৫ টা
সন্ধ্যা আরতি: সন্ধ্যা ৭ টা
শয়ন আরতি: রাত ৯ টা
মন্দির চত্বরেই রয়েছে পূজার সামগ্রী কেনার দোকান।
বিঃ দ্রঃ: বুধবারে মন্দির সারাদিন খোলা থাকে। আপনারা চাইলে ওনাদের ওয়েবসাইটে, ইউটিউব চ্যানেলে ও ফেসবুক পেজে লাইভ দর্শন করতে পারেন।
![]() |
মন্দিরে হনুমানজির বিগ্রহ |
![]() |
মন্দির চত্বর |
কিভাবে আসবেন
------------------------
মেট্রোয় আসলে এমজি রোড স্টেশনে নেমে খুব সম্ভব ২ নম্বর গেট দিয়ে বেরোতে হবে। ওখান থেকে এই মন্দির হাঁটা পথ। এছাড়াও হাওড়া/কলকাতার নানান জায়গা থেকে প্রচুর বাস আছে এখানে আসার জন্য।
গুগল ম্যাপে 'Siddhivinayak Temple' লিখে সার্চ করলে সঠিক লোকেশন পেয়ে যাবেন।
মন্দির চত্বরে গাড়ি রাখার জায়গা রয়েছে।
বিশেষ বক্তব্য
-------------------
একটা কথা আলাদা করে বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে হলো। এই মন্দির কলকাতার বুকে, আর রাজ্যটা পশ্চিমবঙ্গ, যার প্রধান ভাষা হলো বাংলা অথচ গোটা মন্দির চত্বরে সামান্যতম বাংলাও খুঁজে পাবেন না, সব কিছুই হিন্দিতে লেখা। ইমামি গোষ্ঠীর মালিকেরা অবাঙালি হলেও এতদিন যাবৎ কলকাতায় রয়েছেন, ওনাদের ব্যাবসারও প্রাণকেন্দ্র কলকাতা, তার পরেও বাংলা কেন কোথাও ঠাঁই পেলোনা, সেটা বোধ হয় ভেবে দেখা দরকার।
#kolkata #siddhivinayaktemple #siddhivinayaktemplekolkata #westbengal #westbengaltourism
Comments
Post a Comment