হাওড়ার বাকসাড়ার নবনারীকুঞ্জের পুজো
এখানে দুটি পুজো হয়, একটি পুরাতন নবনারী ও আরেকটি নতুন নবনারী। পুজোর নাম অনুসারে দুই জায়গা যথাক্রমে পুরাতন নবনারীতলা ও নতুন নবনারীতলা নামে পরিচিত।
কবে থেকে কোন পুজো শুরু ও কতদিন চলে
------------------------------------------------------------
পুরাতন নবনারীর পুজো শুরু হয় বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন।
নতুন নবনারীর পুজো শুরু হয় অক্ষয় তৃতীয়ার দিন।
দুই পুজোই চলে চার মাস, শ্রাবণ মাসের শেষ রবিবার হাওড়ার চারটি মূল প্রতিমা এবং তার সঙ্গে অজস্র ছোট বড় পার্শ্বপ্রতিমা নিয়ে ব্যান্ডপার্টি ও আলোকসজ্জা সহ বিশালাকার শোভাযাত্রা শুরু হয়, মিট হয় সাঁতরাগাছি মোড়ে| সবার আগে থাকেন শমী চণ্ডী , তারপর দুই নবনারী এবং সবার শেষে রামচন্দ্র। নিরঞ্জন হয় হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর ঘাটে।
জনশ্রুতি আছে, বিসর্জনের সময় ট্রামের তার ছিঁড়ে যাওয়ার জন্য ইংরেজ সরকার এই শোভাযাত্রার রাস্তা পরিবর্তনের কথা বলে, তবে জনতা তা কোনওভাবেই তা মেনে না নেওয়ায় ইংরেজ সরকার সেই তার খুলে ফেলতে বাধ্য হয়।
নবনারীকুঞ্জর আসলে কি ও এর পিছনে থাকা পৌরাণিক কাহিনী
-------------------------------------------------------------------------------------
রাধিকা ও তাঁর আট জন সখী ললিতা, বিশাখা, চম্পকলতা, চিত্রা, তুঙ্গবিদ্যা, ইন্দুলেখা, রঙ্গদেবী ও সুদেবী। সব মিলিয়ে নয়জন নারী একযোগে কুঞ্জর বা হাতির রূপ ধারণ করেছেন। তাই তাঁরা নবনারী। আর সেই হাতির আরোহী হলেন কৃষ্ণ, এখানে তাঁর নাম রসরাজ। যাঁরা এসব নিয়ে চর্চা করেন তাঁদের মতে শ্রীরাধিকার এই অষ্টসখী হলেন আদতে আটটি রসের প্রতীক। শৃঙ্গাররস, হাস্যরস, রৌদ্ররস, করুণারস, বীররস, ভয়ানকরস, বীভৎসরস ও অদ্ভুতরস।
![]() |
পুরাতন নবনারীর বিগ্রহ |
পুরাণ অনুসারে, গোকুল ত্যাগের পূর্বে শ্রীকৃষ্ণ গোপিনীদের কথা দিয়েছিলেন যে, কংসবধের পর তিনি পুনরায় প্রত্যাবর্তন করবেন। কিন্তু তা না হওয়ায়, গোকুলের নয়জন গোপিনী (শ্রীরাধাকে নিয়ে) পুরুষের ছদ্মবেশে কৃষ্ণকে পুনরায় গোকুলে ফিরিয়ে আনার উপক্রম করেন। কৃষ্ণ ছিলেন দ্বারকাধিরাজ। কৃষ্ণ যেতে চান না মথুরায়। তাই তিনি অদ্ভুত শর্ত দিলেন। বললেন, তিনি রাজা, অতএব হাতির পিঠে চড়িয়ে নিয়ে যেতে হবে। তবে সেই হাতি তাঁর রাজ্যের হলে চলবে না। তাঁর এমন বায়নাক্কা শুনে রাধিকা ও তাঁর আটজন সখী, মানে নয় জন নারী মিলে হাতির রূপ ধারণ করলেন। সেই হাতির উপরে বসলেন রসরাজরূপী কৃষ্ণ।
![]() |
নতুন নবনারীর বিগ্রহ |
এই মন্দিরদ্বয়/পুজোর ইতিহাস
-----------------------------------------
শোনা যায় বৃন্দাবনের এক সাধু বাকসাড়ার সাতঘরায় আশ্রম করেন। প্রথমে হোগলা পাতার ছাউনি গড়ে নবনারীকুঞ্জের পুজো শুরু হয় পরে অবশ্য স্থায়ী কাঠামো নির্মিত হয়। পুরাতন নবনারীর পুজো যে ঠিক কত পুরোনো তা কেউ সঠিক ভাবে বলতে পারেননা, কেউ বলে ৩০০ আবার কেউ বলে এই পুজো নাকি ৫০০ বছরেরও বেশি পুরোনো।
![]() |
পুরাতন নবনারীতলায় |
![]() |
পুরাতন নবনারীতলায় |
![]() |
পুরাতন নবনারীতলায় |
যাই হোক পরে একসময় কিছু মানুষ সাতঘরার আদি নবনারী পুজো কমিটি থেকে বেরিয়ে বাকসাড়ায় নতুন নবনারীকুঞ্জের পুজো শুরু করেন, সেই সময়টা ছিল ১২৯২ বঙ্গাব্দ বা ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ।
![]() |
নতুন নবনারীতলায় |
![]() |
নতুন নবনারীতলায় |
![]() |
নতুন নবনারীতলায় |
![]() |
নতুন নবনারীতলায় |
নিত্যদিনের পূজার সময়সূচী
--------------------------------------
সকাল ১১:৩০ থেকে ১ টা এবং সন্ধ্যা ৮ টা থেকে ৯ টা।
কিভাবে আসবেন
-----------------------
ট্রেনে এলে নামতে হবে হাওড়া-মেদিনীপুর/খড়্গপুর/পাঁশকুড়া/মেচেদা/উলুবেড়িয়া শাখার সাঁতরাগাছি স্টেশনে। ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিক দিয়ে বাইরে এসে টোটোতে উঠে ৫-৭ মিনিটেই পৌঁছে যাবেন এই মন্দিরে। দুই মন্দিরের মাঝের দূরত্ব খুব বেশি নয়, হেঁটেই যেতে পারবেন নাহলে টোটো তো আছেই।
এছাড়া হাওড়া/কলকাতা থেকে যদি সাঁতরাগাছি/বাকসাড়াগামী বাসে আসেন তাহলে জানা গেট স্টপেজে নামতে হবে। সেখান থেকে এক টোটোতেই পৌঁছে যাবেন মন্দিরের সামনে।
গুগল ম্যাপে 'Old Nabanari Temple' এবং 'New Navanari Temple' লিখে সার্চ করলে সঠিক লোকেশন পেয়ে যাবেন।
মন্দিরের সামনের রাস্তা খুব বিশাল চওড়া নয়, চার চাকা নিয়ে এলে পার্কিংয়ের সমস্যা হতে পারে তবে দুই চাকায় সেরকম সমস্যা নেই।
#howrah #baksara #satghara #nabanari #santragachi #westbengal #westbengaltourism
Comments
Post a Comment