মহীশূর উদ্যান কলকাতা

এটি কলকাতায় কেওড়াতলা মহাশ্মশানের কাঠের ও ইলেকট্রিক চুল্লির মাঝের অংশে অবস্থিত।

কি কি দেখার আছে এখানে 
----------------------------------------

সুন্দর একটি উদ্যান ছাড়াও এখানে রয়েছে একটি দক্ষিণী স্থাপত্যের বিষ্ণু মন্দির ও একটি শিব মন্দির।

বিষ্ণু মন্দির

বিষ্ণু মূর্তি

শিব মন্দির

এই জায়গাটির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস 
-----------------------------------------------

এই জায়গাটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে মহীশূর রাজ্যের ২৩ তম মহারাজা চামারাজেন্দ্র ওয়াদিয়ারের নাম।

চামারাজেন্দ্র ওয়াদিয়ার

২২ ফেব্রুয়ারি ১৮৬৩ সালে উনি মহীশূরের পুরোনো প্যালেসে জন্মগ্রহণ করেন। উনি সিংহাসনে আরোহন করেন ২৩ সেপ্টেম্বর ১৮৬৮ সালে। ২৫ মার্চ ১৮৮১ সালে উনি মহীশূর রাজ্যের সম্পূর্ণ শাসনভার লাভ করেন ইংল্যান্ডের প্রিভি কাউন্সিলের রায়ের দৌলতে।

উনি ১৮৮১ সালেই 'Mysore Representative Assembly' গঠন করেন। এটি ছিল দেশীয় ভারতে প্রথম আধুনিক, গণতান্ত্রিক আইন প্রণয়ন প্রতিষ্ঠান। ১৮৯৩ সালে স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগো যাত্রার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ইনিই। তিনি নারী শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন এবং কন্নড় বাশোজ্জীবিনী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি বেশ কয়েকটি শিল্প বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে এবং বার্ষিক দশেরা শিল্প প্রদর্শনী পরিচালনা করে মহীশূর রাজ্যের শিল্পায়নকে ত্বরান্বিত করেছিলেন। তিনি কৃষকদের আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছিলেন এবং সরকারী কর্মচারীদের জন্য জীবন বীমা চালু করেছিলেন। উনি ব্যাঙ্গালোর এবং মহীশূর এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যের সংস্কার করিয়েছিলেন।

১৮৯৪ সালে উনি কলকাতায় এসেছিলেন তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড এলগিনের সাথে দেখা করতে। কলকাতায় থাকার জন্য উনি বেছে নিয়েছিলেন একজন আইরিশ ভদ্রমহিলা অ্যানি মংকের হোটেলে যেটা অবস্থিত ছিল ১৩ চৌরঙ্গী রোডে, যেটা কিনা আদতে ছিল কর্নেল গ্র্যান্ডের আস্তানা। একসময় এটিই গ্র্যান্ড হোটেলে রূপান্তরিত হয়।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে ডিপথেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মহারাজ ২৮ ডিসেম্বর ১৮৯৪ সালে কলকাতাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ওনার মৃতদেহ সৎকারের জন্য বর্তমান এই উদ্যানের জায়গাটি কেনা হয়| ওনার মৃত্যুর কয়েক বছর পরে ওনার সন্তানেরা কর্ণাটকের বেলুড়ে অবস্থিত দ্বাদশ শতাব্দীর চেন্নাকেশব মন্দিরের আদলে এই বিষ্ণু মন্দিরটি তৈরী করান। পাশের ছোট শিব মন্দিরটা নাকি ত্রিপুরার মহারাজা তৈরী করিয়েছিলেন। আমেরিকা থেকে ফিরে স্বামী বিবেকানন্দ নিকটবর্তী কালীঘাট মন্দির দর্শনের সময় এই শিব মন্দিরে কিছু সময় কাটিয়েছিলেন।

উদ্যান চত্বর

নিয়মিত মেইন্টেইনেন্সের অভাবে একটা সময় এই জায়গাটি জঙ্গলে পরিণত হয়, হয়ে ওঠে সমাজবিরোধীদের আস্তানা। দুষ্কৃতীরা এর ভিতরের মন্দিরগুলিরও যথেষ্ট ক্ষতিসাধন করেছিল। বিষ্ণু মন্দিরের চূড়ায় থাকা সোনার কলসটি চুরি হয়ে যায়, বিষ্ণু মূর্তির উপরের কাচ ও ব্রোঞ্জের শামিয়ানাও হাপিস হয়ে যায়, এমনকি মন্দিরের মেঝেতে ব্যবহৃত ইতালীয় মারবেল স্ল্যাবগুলিও চুরি হয়ে যায়। 

৮০ র দশকে কলকাতা পৌরসভাকে দেখভালের দায়িত্ব অর্পণ করার আগে অব্দি এই জায়গাটির দেখভাল করা হতো মহীশূর রাজপরিবারের পক্ষ থেকে। এখানে থাকতেন পুরোহিত, মালি ও আদি গঙ্গা থেকে পলি তোলার দায়িত্ব প্রাপ্ত লোক। পুরোহিতের মৃত্যুর পর এই জায়গা বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যায়। এরপর পরবর্তী কালে স্থানীয় কাউন্সিলর শ্রীমতি মালা রায়ের উদ্যোগে এটি নতুন রূপে সংস্কার করে ১৫ এপ্রিল, ২০০০ সালে জনসাধারণের উদ্দ্যেশ্যে খুলে দেওয়া হয়,  মুর্শিদাবাদের একদল কারিগর অনেক দিন ধরে কাজ করে এই জায়গাটির শ্রী ফেরান। রইলো উদ্যান চত্বরের আরো কিছু ছবি।

প্রবেশদ্বার

উদ্যান চত্বরে

উদ্যান চত্বরে

উদ্যান চত্বরে

উদ্যান চত্বরে

উদ্যান চত্বরে

উদ্যান চত্বরে

সময় ও টিকিট
----------------------

সকালে ৬ টা থেকে দুপুর ১ টা 

বিকেলে ৪ টে থেকে সন্ধ্যা ৮ টা 

কোনো টিকিট নেই এখানে।

পার্কিং ও গুগল ম্যাপ লোকেশন 
----------------------------------------------

এটি একদম মেইন রোডের ওপরেই অবস্থিত, সামনেই টু হুইলার পার্কিং রয়েছে (ফ্রি) কিন্তু চার চাকার পার্কিং সামনে নেই।

গুগল ম্যাপে 'Mahisur Udyan & Vishnu Temple' লিখে সার্চ করলেই এটির লোকেশন পেয়ে যাবেন।

#kolkata #mysoregarden #mahisurudyan #westbengal #westbengaltourism

Comments

Popular posts from this blog

হাওড়ার একমাত্র অক্ষত সেমাফোর টাওয়ার

হাওড়ার বেলুড় রাসবাড়ি

হাওড়ার ডোমজুড়ের নারনা কালীবাড়ি